নকুলদানা ॥
আমার একটা বাড়ি আছে। সেই বাড়িতে আছে, আমার বাবা; রোব্বারে সে কাগজ পড়ে, সারা সপ্তাহ সে হিসেব করে। বাড়ির রান্নাঘরে ভাসে মায়ের বানানো মশলার গন্ধ এবং তার ঝাঁজে বিরক্ত আমার মা। আমাদের এই ছোট্ট তিন কামরার ফ্ল্যাটে সুখ শান্তি, ঠাকুরের প্রসাদের মতই সাধারণ মনে হয়।
না না! প্রসাদ বলতে সন্দেশ, জিলিপি বা পায়েস না।
আমাদের সুখ হলো নকুলদানা ও মিছরির মত গৌন, এবং তাতে নতুনত্ব বলতে বাতাসা বা কিশমিশই মুখ বদল। সহজে পাওয়া যায়। চাহিদা কম তো তাই। হয়ত তাই জন্যেই প্রসাদের মিষ্টত্ব না রোচে মনে, না লাগে জিভে। ডাল ভাত ও খিচুড়ির মতো স্বল্প সুখে ভ্রূকুটি দেখিয়ে পিঁপড়ের বেগে জীবন কাটাই আমরা।
আমার ঘরের ভেতরটা একটা আস্ত জগৎ। রাত্রিবেলা সেটা অন্যরকম এক ব্রহ্মান্ড। সেখানে আমি একা; আছে ঠান্ডা হাওয়া, অগোছালো বিশৃঙ্খলতা, চুপচাপ এক মুখ, মৃদু একটা গানের আওয়াজ, সুনসান রাস্তার ব্যাস্ততা, ও অফুরন্ত নিস্তব্ধতা। ঘুম ও সকালের রোদের সেখানে বেশ বন্ধুত্ব। অনিয়ম, বেনিয়ম, ঠিক, ভুল; সবটাই সেখানে আড়ি-ভাব। ভূত-ভবিষ্যৎ সবটাই সেখানকার বর্তমান।
বিশেষ কিছু বলার থাকে না আমাদের এই বাড়িতে। অথচ সুখের নকুলদানা বিচিত্র কোন কারণে, কমে গেলেও, একেবারে নির্মূল কখোনই হয়না।